চেয়ারম্যানের অভিযোগ ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান শপথ ভেঙেছেন

ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম ব্যাংকের গোপনীয়তা ভেঙেছেন। পরিচালক হওয়ার সময় তিনি গোপনীয়তা রক্ষার যে শপথ করেছিলেন, তা লঙ্ঘন করেছেন। ব্যাংক নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁকে পদত্যাগ করতে বলব না, উনি নিজে সরে গেলে সমস্যা নেই।’ 
ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার জবাব দিতে গিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। গতকাল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ব্যাংকের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখন থেকে একমাত্র চেয়ারম্যানই জবাব দেবেন। 
১১ মে আহসানুল আলম নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছিলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাই পরিচালনা পর্ষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার সরে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরপর গত শনিবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে স্বতন্ত্র এই পরিচালক কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানান, জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইফতারের ১৩ কোটি টাকা এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের সুবিধাভোগীদের তালিকাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এ ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলের প্রদানের বিষয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। এ নিয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরাস্তু খান বলেন, ‘ওনার (আহসানুল আলম) বিভিন্ন মন্তব্যের খবর গণমাধ্যমে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে ডাকা হয়। গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, কী হয়েছে তোমাদের। আমি তো তোমাদের থেকে জাকাতের টাকা চাইনি, কে দিতে বলেছে? প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা ভালোভাবে নেননি। আমি বলেছি, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুঃখ হলো ওই ভদ্রলোক জানেন না জাকাতের হিসাবে কত টাকা আছে। উনি জানেন না জাকাত ও মুনাফা কোনটি।’ 
আরাস্তু খান জানান, ‘উনি বলেছেন, সিএসআর সুবিধাভোগীদের টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভুয়া, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনাও হয়নি। আমরা কেন এ তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব? বলা হয়েছে, শিক্ষাবৃত্তির ১৯ কোটি টাকা কারা পেল, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন কিছু হয়নি। উনি বলেছেন, রমজানে যে ইফতার বিতরণ করা হয় তা এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে। তা কেন হবে? আমরা বেসরকারি ব্যাংক, অনেক শাখা আছে, তার মাধ্যমে দেওয়া হবে। এভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, পরিচালক হওয়ার সময় কিছু শর্ত মেনে স্বাক্ষর করতে হয়। শর্তানুযায়ী ব্যাংকের কোনো তথ্য তিনি এভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। উনি সেই শর্ত ভেঙেছেন। পরবর্তী পর্ষদ সভায় ওনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ‘৩৪ বছরে ব্যাংকের জাকাত তহবিলে ৩৪৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর থেকে ১৭৩ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ট্যাক্সের জন্য কিছুটা টাকা আলাদা রাখার পর ২৮ কোটি টাকা থাকে। আমরা গত বছর ৪৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছি। উনি এটাকে জাকাতের টাকা বানিয়ে ফেলেছেন।’ 
প্রশ্নের জবাবে আরাস্তু খান বলেন, ‘উনি পর্ষদে এসে জানিয়েছেন, তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি, নিন্দা জানিয়েছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিষয়টা জানিয়েছি। উনি বাসায় গিয়ে আবারও সংবাদ সম্মেলন করলেন। এটা দুঃখজনক।’ 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল আলম ২০১৬ সালের ৬ মে ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। তারপর এ বছরের ৫ জানুয়ারি হঠাৎ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ‘পদত্যাগ’ করলে তিনি নতুন ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি পরিচালনা করছিলেন স্বতন্ত্র ওই পরিচালক। শাখায় শাখায় গিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়ে আসছিলেন, যা নিয়ে অন্য পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয় বলে জানা যায়। তাঁর সঙ্গে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি দেশের বাইরে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.