লন্ডনে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, অপেক্ষা বিএনপি নেতাকর্মীদের
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন তিনি। সেখানে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন অবস্থান করবেন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে অবস্থানকালে বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতা দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করবেন বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করছেন।
দলটির নেতাকর্মীদের দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে। তারা বলছেন, দলের দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় সেখানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং আগামী নির্বাচনের প্রার্থীতালিকা চূড়ান্তসহ দলীয় ও সাংগঠনিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মীর সাথে আলাপকালে জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরির ব্যাপারে দুই শীর্ষ নেতা বৈঠক করবেন। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে দলীয় চেয়ারপারসনের এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৭টায় চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তারেক রহমানের পরিবার ছাড়াও বেগম জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া এখনো ডাক্তারের সময় না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে তিনি ডাক্তারের সময় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির দাবি- শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কখনোই নিরপেক্ষ হবে না। সে জন্য কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী বেশ কিছু দিন কাজ করে সহায়ক সরকারের একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। সেটি তারেক রহমানের সাথে আলোচনার পর চূড়ান্ত করবেন এবং দেশে ফিরে উপযুক্ত সময়ে জাতির সামনে তুলে ধরবেন বেগম খালেদা জিয়া। দলটির নেতারা বলছেন, এই রূপরেখা নিয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা না হলে দাবি আদায়ে তাদের রাজপথের আন্দোলনে যেতে হবে। শীর্ষ দুই নেতা দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে লন্ডনে কথাবার্তা বলবেন।
এ দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা আলোচনা চাই। বর্তমান সরকার যদি আলোচনা না করে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-হত্যা-গুম অব্যাহত রাখে তাহলে বিরোধী দল হিসেবে আমাদের আন্দোলনের পথই বেছে নিতে হবে, এর কোনো বিকল্প থাকবে না। এই সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় নেই। সবার অংশগ্রহণমূলক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই অপশক্তির পতন হবে। খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডন গেছেন দেশনেত্রী। তাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু লন্ডনে দেশনেত্রীর সফর হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ পতনের জন্য। তিনি চিকিৎসার সময়গুলো ব্যবহার করছেন। এটা নিয়ে অপপ্রচার করার কিছু নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোটবদ্ধভাবেই আগামী নির্বাচন করার কথা ভাবছে বিএনপি। তবে আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে জোটের পরিধি আরো বাড়াতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকেও জোটে আনতে চান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সাথে বিভিন্নভাবে আলোচনা চলছে বিএনপির। তাদের কিভাবে জোটভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনার কথা রয়েছে।
গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্য পদ, দু’টি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ এবং ছাত্র সম্পাদকের পদ কাদের দেয়া হবে, সেই বিষয়টিরও ফয়সালা হতে পারে লন্ডনে। এর বাইরে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া শ্রমিক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও ছাত্রদলের কমিটিও গঠিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, দেশে ফিরেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ঘোষণা করবেন বেগম জিয়া। পূর্ণাঙ্গ হবে আংশিক কমিটিগুলোও।
ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’-এর বিধান সংযোজিত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিন বছরেও সম্পন্ন হয়নি তৃণমূল পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জেলার কমিটি ঘোষিত হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের আশা, লন্ডনে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলাপে এই বিষয়গুলোরও সমাধান হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। চিকিৎসা শেষ করেই দেশে ফিরে আসবেন। আগে তার নেতৃত্বে যেভাবে দল পরিচালনা হয়েছে ফিরে এসেও তিনি অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেবেন।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: মো: আনোয়ারুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে আসছি। নেত্রকোনা জেলায় বিএনপির এক লাখ নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গেছেন। সেখানে দলের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে কথাবার্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। আমরা প্রত্যাশা করছি, চিকিৎসার পাশাপাশি সেখানে দলের সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে যা দল ও দেশবাসীর জন্য মঙ্গলজনক হবে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। সেখানে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দেশের চলমান ইস্যু ছাড়াও দলীয় বিষয়ে কথাবার্তা হবে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন এবং সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে।
No comments